Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

এক নজরে মহাজনপুর ইউপি

সবুজ, শ্যামলনদীমাতৃক এদেশবাংলাদেশ এদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাংশে অবস্থিত বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী, ঐতিহাসিক মুজিবনগরের ঐতিহ্য ও স্মৃতিবিজড়িত দেশের ৬৪টি জেলার ক্ষুদ্রতম জেলা এই মেহেরপুর।মেহেরপুর জেলার ৩টি উপজেলার মধ্যে মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার অধীনে ৪টি ইউনিয়ন পরিষদের অন্যতম একটি ৪নং মহাজনপুর ইউনিয়ন পরিষদ।মহাজনপুর ইউনিয়ন পরিষদ কোন সালে স্থাপিত হয় তার সঠিক ইতিহাস পাওয়া যায়নি।তবে অনুমান করা হচ্ছে ১৯৪২সালের কোন এক সময় এইউনিয়ন পরিষদ স্থাপিত হয়।বর্তমানে ইউনিয়ন এলাকার ১টি গ্রাম রয়েছে মহাজনপুর এবং মহাজনপুর নামের সাথে সঙ্গতি রেখেই এর নামকরন করা হয়েছে অনুমান করা হয়।তবে মহাজনপুর নামের উৎস  তৎকালীন সময়ে মহাজনরা বসবাস করতে এবং ব্যবসা ব্যানিজ্য করতেন।সে থেকে মহাজনপুর নামে অবহিত।

 

প্রায় ২৫.৬৯ বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে এই ইউনিয়ন পরিষদ অবস্থিত।মহাজনপুর ইউনিয়নের উত্তরে পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদ, দক্ষিণে জিবনগর উপজেলার নতিপোতা ইউনিয়ন পরিষদ, পশ্চিমে  আমদহ ইউনিয়ন পরিষদ অবস্থিত।

 

মহাজনপুর ইউনিয়নে মোট গ্রামের সংখ্যা ৬টি ও মৌজার সংখ্যা ৫টি। ৬টি গ্রামের মধ্যে চার পাশ দিয়ে ভৈরব নদি প্রবাহিত তার মাঝে অবস্থিত যথাক্রমে যতারপুর, গোপালপুর, মহাজনপুর, বাবুপুর, পরানপুর  ও কোমরপুর ।

 

মহাজনপুর ইউনিয়নের ভূমি-সমভূমি, কৃষিকাজে উপযুক্ত ও উরবর জমির মধ্যে একফসলী ২০৭.৫ হেক্টর, দু‘ফসলী ১৭১৫ হেক্টর, তিন ফসলী ১৫১৯.৫০ হেক্টর ও পতিত জমি ৮১.৮৯ হেক্টর।

 

২০১১ সালের আদম শুমারীর ফলাফল অনুযায়ী সবর্মোট ১৯১২৭ জন মানুষ অত্র এলকায় বসবাস করে। তার মধ্যে পুরুষ ৯৫২১ জন, মহিলা ৯৬০৬ জন। রাস্তার পরিমাণ পাকা ২০ কিলোমিটার, এইচ বি বি ১০ কিলোমিটার ও কাঁচা ১৬ কিলোমিটার।

 

মেহেরপুর শহর হতে আনুমানিক ১৫(পনর) কিলোমিটার দুরে মহাজনপুর ইউনিয়ন পরিষদের পুরাতন কাযার্লয়টি অবস্থিত।বর্তমানে কোমরপুর বাজারে অবস্থিতি নব র্নিমিত ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনে উক্ত অফিসে ২০০৪ সালের ১০ জানুয়ারী হইতে এ পযর্ন্ত নিয়মিত অফিস কাযর্ক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। ১ একর  জমির উপর ভবন অবস্থিত। একতলা পুরাতন মডেলে ৫(পাঁচ) কক্ষ বিশিষ্ট অফিস ভবনটি বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হয়।

 

বতর্মান কমপ্লেক্স ভবন এর সামনে ইউনিয়ন ভূমি অফিস অবস্থিত। মহাজনপুর ইউনিয়ন এলাকায় ১৬ (ষোল)টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫ (পাঁচ)টি, রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫(পাঁচ)টি,  মাদ্রাসার সংখ্যা ৩(তিন)টি, রেজিঃ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২(দুই)টি, ও কলেজ ১(এক)টি, ২(দুই)টি বাজার। ইউনিয়নের স্বাক্ষরতা দানে সক্ষম ব্যক্তিদের সংখ্যা শতকরা ৫০ ভাগ। মেহেরপুর জেলাকে ১০০ ভাগ স্বাক্ষরতা দানের একটি প্রকল্প সরকার গ্রহণ করেছিলেন যার ফলাফলে উক্ত চিত্র দেখা যায়। শিক্ষার হার শতকরা ৩৮.১৫ (পুরুষ ৩৯.৪২ মহিলা ৩৪.৭৬) ভাগ। এ এলাকাকে শিক্ষার ক্ষেত্রে আরও মূল্যায়ন করা উচিত। ইউনিয়নে মসজিদের সংখ্যা ২৭(সাত্তাশ)টি। এর মধ্যে গোপালপুর মাঝ পাড়া জামে মসজিদটি সবচেয়ে পুরানো মসজিদ।

 

মহাজনপুর ইউনিয়নের কোমরপুর বাজারে  একটি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র আছে। বর্তমানে এখানে কোন এম,বি,বি,এস   ডাক্তার নাই । ২(দুই) টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। স্বাস্থ্য সেবার মান নিম্ন পযায়ে তবে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সাবক্ষণিক একজন এম,বি,বি,এস ডাক্তার কর্মরত থাকলে   কমিউনিটি ক্লিনিকগুলি আরও স্বচল হবে এবং স্বাস্থ্য সেবার মান বাড়বে। সক্ষম দম্পত্তির জনগোষ্ঠির শতকরা ৮৭.৮৭ ভাগকে পরিবার পরিকল্পনা কাযক্রমের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা সরবরাহ ও ব্যবহারের জন্য ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করে সকলকে স্যানিটেশনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। পরিবার বৃদ্ধি পাওয়ায় লক্ষ্য অর্জনের জন্য অত্র ইউনিয়ন পরিষদে ইউনিয়ন ওয়াটসন কমিটি গঠন করে এর কাযর্ক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ইউনিয়নে পূরবের জরীপ দেখা যায মোট খানা/পরিবারের সংখ্যা ৪৬৯১ টি। এর মধ্যে  টি পায়কানা নির্মাণ ছাড়াই যত্রতত্র মলত্যাগ করতেন। সরকারি ভাবে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে হত দরিদ্র পরিবারগুলির মধ্যে রিংস্লাব সরবরাহ করে মহাজনপুর ইউনিয়ন এলাকাকে ১০০ ভাগ স্যানিটেশনের আওতায় আনার পরিকল্পনা ২০০৯-১০ অর্থ বছরে গ্রহণ করা হয়েছে। ইতি মধ্যে এই লক্ষ্য অর্জন করলে এলাকায়   ১০০ ভাগ স্যানিটেশন ঘোষণা করা সম্ভব হয়েছে। ২০০৮ সালের জুন মাসের মধ্যে অত্র ইউনিয়ন এলাকায় ১০০% জন্ম নিবন্ধন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্যাপক কাযক্রম গ্রহন করা হয়েছিল। ইতি মধ্যে ১০০% মানুষের জন্ম নিবন্ধন ও ১০০% মানুষের নিবন্ধন সনদ বিতরন করা হয়েছে। বর্তমান  অনলাইন নিবন্ধন কাযর্ক্রম চলছে।

 

খাদ্য উৎপাদনে মেহেরপুর জেলা দেশের উদ্বৃত্ত খাদ্য উৎপাদন জেলা হিসাবে চিহ্নিত। মহাজনপুর ইউনিয়ন তারই একটি অংশ। অত্র ইউনিয়নে রয়েছে চাষের উপযুক্ত জমি। স্বাধীনতার পুবর্কালে এখানে কৃষির তেমন কোনও  উন্নতি হয়নি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পরবর্তীকালে বিশেষ করে ১৯৭৬ সালের দিকে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক ভাবে অগভীর ও গভীর নলকূপের সরবরাহ করা হলে চাষে একটি বৈপল্লবিক পরিবর্তন আসে। বর্তমানে উপসী, ইরি জাত, বোরো ধান, গম, সবজি, কলা, তামাক ইত্যাদি চাষে ব্যাপক ফলন পাওয়া যাচ্ছে। এলাকার চাহিদা মিটিয়েও উদ্বৃত্ত খাদ্য, সবজি, কলা ও অন্যান্য শস্যাদি ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হচ্ছে।  বর্তমানে ডিজেল, রাসায়নিক সার ইত্যাদির মূল্য বৃদ্ধির জন্য কৃষকরা আশানুরুপ লাভবান হতে পারছে না। ইউনিয়নের সব গ্রামে মেহেরপুর পল্লী বিদ্যূৎ সমিতি বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সক্ষম হয়েছে। মাঠে মাঠে ডিজেল চালিত অগভীর নলকূপগুলিতে শর্ত শিথীল করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারলে কুষিতে আরও পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। কৃষি উপযুক্ত জমিগুলির কিছু কিছু নীচুজলা ভূমি। এ গুলিতে শুধুমাত্র একবার ধান উৎপাদন হয়। বর্ষাকালে এর কিছু কিছু জমিতে দেশী পোনা মাছের চাষ হচ্ছে। বাকীগুলি অনাবাদী হিসাবে পড়ে থাকছে। জলাভূমির মালিকদের উদ্বুদ্ধ করে সমবায় ভিত্তিতে এ সকল জলাভূমিতে বিলুপ্ত প্রায় দেশি কৈ, মাগুর, শিং, গলদা চিংড়ি প্রভৃতি মাছ চাষের ব্যবস্থা করলে কৃষকরা আরও লাভবান হবে। দারিদ্র বিমোচনে গরু ছাগল, ভেড়া, হাঁস-মুরগী পালনে কৃষককে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। দেশী গরু, ছাগল, ভেড়া প্রজাতির পশু বিলুপ্তির পথে। উপযুক্ত উদ্দোক্তাদের খুঁজে বের করে তাদের ঋণ সরবরাহ করে বিভিন্ন উদ্দ্যোগ গ্রহণ করলে অনেকে গবাদি পশু পালন করে অধিক লাভবান হবেন। এ ধরণের কৃষকদের ছাগল ভেড়া, হাঁস-মুরগী পালনে উৎসাহিত করতে হবে। এ ইউনিয়নে হরিরামপুর গ্রামে একটা বড় বিল রয়েছে। এখানে মাছ চাষের পাশাপাশি হাঁস চাষ খুব লাভজনক হয়ে উঠতে পারে। এ ব্যাপারে গোপালপুর মৎসজীবি সমবায় সমিতির সদস্যদের উৎসাহিত করতে হবে।

 

ইউনিয়নে অধিকাংশ রাস্তা কাঁচা। কিছু এইচ,বি,বি,করণ সম্ভব হয়েছে। অল্প পরিমাণে পাকা ও কার্পেটিং করা সম্ভব হয়েছে। যতারপুর গ্রাম হতে মহাজনপুর হাট রাস্তাটি ১৬.২৫ কিলোমিটার রাস্তার প্রশস্ত ও উন্নতমানের কার্পেটিং রাস্তার কাজ শেষ হওয়ায় রাস্তাটি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে।  ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার উৎপাদিত শস্য ও সবজি দেশের দুর দুরান্তে স্বল্প ব্যয়ে কৃষকরা পাঠিয়ে উপযুক্ত মূল্যে বিক্রয় করে কৃষকগণ লাভবান হতে পারবেন। অত্র এলাকায় কোনও ক্ষুদ্র বা মাঝারী শিল্প নেই। গোপালপুর গ্রামের একটা অংশে কয়েক ঘর দাস পরিবার বাস করে। তারা বাঁশের তৈরী ডালা, কুলা ইত্যাদি তৈরী করে বাজারে বিক্রয় করে। এ সামান্য কুঠির শিল্প ছাড়া অন্য কোন কুটির শিল্পের অস্তিত্ব এখানে নেই। ফলে অশিক্ষিত, শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। এ বাড়তি বেকার যুবকও মহিলাদের বিভিন্ন আয় বর্ধক কাজের প্রশিক্ষণ ও ঋণ দিয়ে তাদের আত্মনির্ভরশীল হবার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে পারলে তারা দেশের জনশক্তিতে পরিণত হবে। অত্র ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় আইন শৃংখলা সবর্দা প্রায় উন্নত পযায়ে ছিল।

 

 

এ ইউনিয়ন পরিষদ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক পল্লী প্রকল্প -২৫ এর আওতায় জনগণের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত রেখে জবাবদিহি মুলক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য নিবার্চিত হয়ে ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে থেকে পাইলট প্রকল্প ভুক্ত হয়েছে। এ প্রকল্পে মেহেরপুর জেলার ৬টি ইউনিয়নের তুলনায় প্রায় ৩(তিন) গুণ।

 

ইউনিয়ন ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে এ ইউনিয়ন পরিষদ স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় কর্তৃক এল,জি,এস,পি প্রকল্পের আওতায় জনগনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত রেখে আরও উন্নয়ন মুলক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য নিবার্চিত হয়ে বিগত ২০০৪-০৫ অর্থ বছর হইতে এই প্রকল্পের কাযর্ক্রম পরিচালনা করে আসছে। উল্লেখিত অর্থ বছরে এ প্রকল্পে সদর উপজেলায় এক মাত্র মহাজনপুর ইউনিয়ন সুযোগ পেয়ে ছিল। প্রকল্প ভুক্ত হওয়ায় উন্নয়ন কর্মকান্ডে প্রাপ্ত অর্থ সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদ এর কাছে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় প্রেরণ করে।

 

বরাদ্দ বৃদ্ধি পেলে বৃক্ষরোপণ, পরিবেশ সংরক্ষণ স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। ফলে মানুষের জীবনের মান উন্নয়ন হবে। অত্র ইউনিয়ন এলাকায় মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে এবং অনেকে ত্যাগ স্বীকারে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতার সুফল মানুষের ঘরে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।

 

মিনারুল